বৌদির ঘরে আটকানো একটি দুপুর – পার্ট ১

 


ওনার দরজাটা ভেতর থেকে টেনে বন্ধ হতেই আমার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল… জানতাম, আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাইরে বের হওয়া অসম্ভব! কিন্তু যে চোখদুটো আমার দিকে তাকিয়ে ছিল—ওখানে ভয় ছিল না, ছিল লুকোনো আগুন…

.

.

.

পাশের ফ্ল্যাটে থাকে রূপা বৌদি—বয়স বেশি না, কিন্তু ব্যক্তিত্বে, সাজে, আচরণে যেন অদ্ভুত একটা টান আছে। ওনার স্বামী প্রায়ই বাইরে থাকে অফিসের কাজে, আর বাসায় থাকলেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওনার দেখা পাওয়া মুশকিল।

সেদিন ছিল শুক্রবার। দুপুরে বাসায় একাই ছিলাম। হঠাৎ দরজায় টোকা—দেখি রূপা বৌদি, চুলগুলো এলোমেলো, গলায় পাতলা ওড়না, আর চোখে এমন এক অস্বস্তি যেন বলছে—“ভিতরে আসো, কথা আছে।”

আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ওনি ফিসফিস করে বললেন,
—“একটু আসো তো, জানালার গ্রিল নাকি নড়ছে। ভয় লাগছে।”

গ্রিল দেখার অজুহাতে আমি ওনার ফ্ল্যাটে ঢুকলাম। ঢুকতেই টের পেলাম ঘরে হালকা সুগন্ধি ভাসছে। লাইট কম, পর্দা নামানো। বাইরে তখন প্রচণ্ড রোদ।

গ্রিল চেক করতে গিয়েই হঠাৎ দরজা জোরে বন্ধ হওয়ার শব্দ। ঘুরে দেখি বৌদি আমার একদম পাশে দাঁড়িয়ে।

—“দুপুরে কেউ থাকে না এখানে… আর আজকে বিদ্যুৎও নেই… তুমি গেলে আমি ভয় পাবো।”

ওনার কণ্ঠে ভয় কম, কিছু অন্যরকম ঘনত্ব বেশি ছিল।

আমি একটু হকচকিয়ে বললাম,
—“ঠিক আছে, থাকি… কিন্তু দরজা বন্ধ করলে কেন?”

বৌদি হেসে বললেন,
—“বাতাসে বন্ধ হয়ে গেছে হয়তো… আর তোমার তো ভয় নেই, তাই না?”

আমি কী বলব বুঝে ওঠার আগেই ওনার আঁচলটা পাশের টেবিলে পড়ে গেল। পাতলা হাত দিয়ে সেটা তুলতে গিয়ে ওনি একটু নিচু হলেন, আর আমার চোখ অনিচ্ছেও সেই দিকেই টানল।

ওনি উঠে দাঁড়াতেই হেসে বললেন,
—“চা খাবা? নাকি গরম কিছু?”

ওনার ঠোঁটের কোণায় খেলা করা সেই রহস্যময় হাসি আমার গলা শুকিয়ে দিল। আমি কিছু বলতে পারছিলাম না।

বললেন,
—“দাঁড়িয়ে থেকো না, ভিতরে এসো… জানালাটা দেখিয়ে দিই।”

আমি যখন ওনার পিছন পিছন বেডরুমে ঢুকলাম, দেখলাম জানালার পাশে একটা আয়না, আর সেখানে আমাদের দু’জনের প্রতিবিম্ব দাঁড়িয়ে। বৌদি হালকা কাঁধে হাত রাখলেন।

—“তোমার চোখে ভয় নেই… কিন্তু লুকোনো কথা আছে মনে হয়।”

দুজনের মাঝে দূরত্ব তখন এক হাতেরও কম। ঘরের নিস্তব্ধতা, পর্দা-ঝোলা আলো, আর বাইরে রোদের ঝাঁঝ মিলিয়ে তৈরি করছিল অন্যরকম গরম একটা দুপুর।

ওনি ফিসফিস করলেন,
—“জানো? দুপুরের এই নীরবতা কারও সঙ্গে ভাগ করতে ইচ্ছে করছিল…”

ওনার কণ্ঠ, নিঃশ্বাস, দৃষ্টি—সবকিছু থমকে ছিল আমার দিকে।

আমি কিছু বলার আগেই ওনি জানালার পাশে এসে দাঁড়ালেন, তারপর ধীরে দরজাটা ভেতর থেকে চাবি দিয়ে চেপে বন্ধ করে দিলেন।

শব্দটা খুব ছোট ছিল… কিন্তু পুরো দুপুরটাকে পাল্টে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

ঘরটা বন্ধ হতেই বাতাসটাই বদলে গেল…
দরজার তালাটা চেপে বন্ধ করেই রূপা বৌদি ধীরে আমার দিকে ফিরলেন। ঘরের ভেতর নীরবতা, কেবল ওনার নিঃশ্বাসের শব্দ টের পাওয়া যাচ্ছে। জানালার পর্দা নড়ছে হালকা বাতাসে, আর আলো এসে পড়ছে ওনার সোনালি হাতের গড়ন ও মুখের পাশে।

আমার দিকে খানিকটা এগিয়ে এসে বললেন ফিসফিস করে—
“তুমি ভয় পাচ্ছো?”

আমি মাথা নাড়তেই ওনি আরও এগিয়ে এলেন। আমাদের মাঝে আর কোনো দূরত্ব নেই। ওনার চুলের গন্ধ, ঘাড়ের পাশে হালকা ঘাম, আর চোখের দৃষ্টিটায় চাপা আগ্রহ – সব মিলিয়ে বুক ধড়ফড় করছে।

ওনি হঠাৎ বললেন,
“দুপুরের এই সময়টা কাউকে বলো না… আজ আমি কাউকে চাইনি এখানে, শুধু তোমাকেই।”

আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি, কী করা উচিত বুঝতে পারছি না। ওনি ধীরে হাত বাড়িয়ে আমার শার্টের কলারে আলতো টান দিলেন।

“বসো…”
ওনি বিছানার পাশে চেয়ারটা দেখালেন, কিন্তু নিজে দাঁড়িয়ে থাকলেন ঠিক সামনে। ওনার চোখ নামছে না আমার চোখের ওপর থেকে।

ঘরের ভেতরে ফ্যান বন্ধ, নিস্তব্ধতা এমন যে নিঃশ্বাসও ভারী লাগে। হঠাৎ বৌদি এক পা এগিয়ে এসে জানালার পর্দাটা একটু সরালেন—আলো এসে পড়ল ঘরময়, কিন্তু বাইরে থেকে কেউ দেখতে পারবে না এমন কোণায় দাঁড়িয়ে আমরা।

বৌদি হালকা স্বরে বললেন,
“আমি জানি তোমার চোখ এড়ায় না… তুমি যেদিন প্রথম এ বাসায় উঠলে, সেদিন থেকেই বুঝেছি।”
বলে নিজের ওড়নাটা পাশের টেবিলে রেখে দিলেন—যতটা স্বাভাবিকভাবে সম্ভব।

আমার কণ্ঠ শুকিয়ে গেছে। ওনি এগিয়ে এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন,
“আমি কারওর সঙ্গে এমন আরাম পাই না… দুপুরের এই নীরবতাটাই আমায় সবচেয়ে বেশি টানে। তুমি থাকলে মনে হয় কেউ বুঝেছে।”

আমার হাতটা ধরলেন ধীরে। হাতের তালু নরম, কিন্তু চাপটা স্পষ্ট।

তারপর খুব আস্তে, বুকের ভেতরের জমে থাকা কিছু খুলে বললেন—
“আজ আমি কারও বৌদি নই… শুধু একজন নারী, যে দুপুরটা আটকে রাখতে চায়।”

বাইরে সূর্যের আলো নেমে আসছে পর্দার আড়াল দিয়ে, ভেতরে ঘরের গরমে নিঃশ্বাসের শব্দ মিলেমিশে যাচ্ছে।

ঘড়ির কাঁটা থেমে গেছে মনে হলেও দুপুর কিন্তু তখনো অনেক বাকি…


পার্ট ০২ লোডিং................


Post a Comment

0 Comments