বৌদির ঘরে আটকানো একটা দুপুর – পার্ট ২

 



দরজাটা ভেতর থেকে লক হতেই বুকের ভেতর কেমন যেন চাপা শব্দ উঠল। ঘরের বাতাস বদলে গেছে। বাইরে রোদের উত্তাপ, আর ভেতরে নরম অন্ধকারে নেমে আছে এক অদ্ভুত নীরবতা।

রূপা বৌদি ধীরে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। তাঁর চোখদুটো অদ্ভুতভাবে শান্ত, কিন্তু ভেতরে চাপা একটা আগুন যেন দাউ দাউ করছে। ওড়নাটা তখনো টেবিলে পড়ে আছে, কাঁধের খোলা অংশে ঘামের চিকচিকে আভা।

আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম জানালার পাশে। বাইরে তাকানোর ভান করলেও মনটা আটকে ছিল ঠিক আমার পেছনে থাকা সেই নারীতে।

বৌদি এগিয়ে এসে খুব নিচু স্বরে বললেন—

“তুমি আমার ওপর বিশ্বাস করো… তাই না?”


আমি কথাটা ঠিকঠাক গিলতে না গিলতেই তিনি হালকা করে আমার হাতটা ছুঁয়ে দিলেন। সেই স্পর্শটা বিদ্যুতের মতো দ্রুত ছড়িয়ে গেল শরীরজুড়ে।

"আমি কাউকে ডাকিনি আজ।"

বলেই ওনি একটু কাছে এলেন, যেন নিঃশ্বাসও গোনা যায়।

ঘরের ভেতর ফ্যান বন্ধ। বাতাস ভারী। চোখে চোখ পড়তেই মনে হলো, এই দুপুরে সময় আর বাস্তবতা – দুটোই বাইরে আটকে গেছে।

হঠাৎই বৌদি জানালার পাশে রাখা হালকা পর্দাটা তুলে দিলেন। বাইরে রোদ ঝলমল করছে, কিন্তু ভিতরের আবহ অন্ধকারেই ঢাকা। আলো এসে পড়ল ওনার গলা আর মুখের পাশে।

“তুমি জানো?”

ওনি ফিসফিস করে বললেন,

“বিকেলের আগে কেউ ফিরবে না।”

আমি চুপ। কিন্তু আমার নীরবতাই যেন ওনার কাছে সম্মতি সেজে দাঁড়িয়েছে।

ওনি আলতো করে বিছানার দিকে হাঁটলেন। পায়ের বাঁক, পায়ের শব্দ, আর পেছনে ভাসমান সুগন্ধি যেন আমাকেও টেনে নিয়ে যাচ্ছে ওইদিকে।

বিছানার কিনারায় বসে বললেন—

“একটা প্রশ্ন করি? বাইরে গিয়ে কাউকে কি এসব বলতে পারবে?”

আমি চোখ নামিয়ে বললাম,

“না…”


বৌদি হালকা হেসে বললেন,

“তোমার চোখ অনেক আগেই আমাকে বলে দিয়েছিল। তুমি তাকিয়ে চুপ থাকো, কিন্তু চাও গোপনে সব দেখতে…”

আমার বুক কেঁপে উঠল কথাটায়।

তিনি উঠে দাঁড়ালেন আবার। আমার দিকে এগিয়ে এসে কাঁধে হাত রেখে বললেন—

“দুপুরগুলো এমন হোক… যে দুপুরে দরজাটা কেউ নাড়াবে না।”

আমার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। তাঁর আঙুলগুলো সরে এল আমার বাহু বেয়ে। এত ধীরে, এত নরম যেন ইচ্ছাকৃতভাবে সময়কে ধীর করে দেয়।

বাইরে কারও আওয়াজ নেই। রোদের গরম মিশে আছে দমবন্ধ করা উত্তাপে।


ওনি বললেন—

“আমি চাই… তুমি আজ একবারও চোখ না সরাও আমার দিক থেকে।”

তিনি আরেক পা এগিয়ে এলো। এত কাছে যে তাঁর চুলের গন্ধ, গলার উষ্ণতা, কাঁধের বাঁক – সব একসাথে আমাকে ঘিরে ফেলল।

আমি ফিসফিস করে বললাম—

“আপনি… নিশ্চিত?”

হঠাৎ বৌদি মাথা একটু কাত করে বললেন—

“এই প্রথম কেউ আমাকে আপনি বলে ডাকছে না ভিতরে থেকে…”

এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে ফিসফিস করলেন—

“আমাকে রূপা বলো… বৌদি না।”

এই কথাটা যেন পুরো দুপুরকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিল।

ওনি ধীরে আমার হাতটা ধরে টেনে নিয়ে এলেন পর্দার আড়ালে। সূর্যের আলো তখন ঠিক ওনার মুখের অর্ধেকটা ছুঁয়ে আছে।


“ভয় পেয়ো না…”

বললেন তিনি,

“আমি থামতে জানি… কিন্তু ছেড়ে যেতে জানি না।”

আমার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে। চোখে চোখ পড়তেই আমি বুঝলাম—

আজ এই দুপুরটা কোথাও আর থামবে না।

রূপা ধীরে আমার বুকের কাছে মুখ এনে বললেন—

“তোমাকে দিয়ে শুরু হলো… জানো তো?”

পর্দার ফাঁকে বাইরের রোদের আলো নেমে এসেছে তার কপালে, আর ঘরের ভেতরে উঠছে নিঃশ্বাসের উষ্ণতা।

দুপুর থমকে গেছে।

শেষ পর্ব লেডিং..............


Post a Comment

0 Comments