পর্ব ১
............




সন্ধ্যার আগে আমি ছাদের উপর দাঁড়িয়ে আছি পুরো আকাশেই আষাঢ়ের কালো মেঘে ঢেকে গেছে। আমার সামনের দিকের মাথার চুলগুলো বেশ বড় বড়। একটু পর পর দমকা হওয়ায় আমার চুলগুলো উড়ছে। আমার মনে হচ্ছিল খুব জোড় বৃষ্টি হবে।আবার ঝড়ের আভাস বেশ ভালো মতোই টের পাচ্ছি আমি।কিছু একটা ভাবতে ইচ্ছা করছে আমার। কিন্তু মাথা একদম ফাকা ফাকা মনে হচ্ছে।
এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।তবুও অন্যমনস্ক হয়ে


আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি ।আকাশে কালো মেঘের গর্জন আস্তেই বেড়ে চলেছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই আমার সমস্ত শরীর ভিজিয়ে দিলো আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টি।
চোখ বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।আমার কাঁধে হাত দিতেই আমি খানিকটা চমকে উঠে নিজেকে সামলে নিলাম।চোখ মেলে দেখি আমার সামনে পুষ্পিতা দাঁড়িয়ে।বেশ কয়েকটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম পুষ্পিতার দিকে। পুষ্পিতা আমার কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ছাদের ধরে নিচের দিকে চেয়ে রইলো।


বৃষ্টি কিছুটা কমে যাওয়ার পর আমি বাসার ভিতরে গেলাম।আমার পিছন পিছন পুষ্পিতাও ছাদ থেকে নেমে আসলো।

ড্রয়িংরুমে পুষ্পিতার লাগেজটা দেখে আমি বেশ অবাক হলাম।মাস পাঁচেক হলো আমার বাবা মারা গেছেন।উনার ব্যবসা এখন আমার বড় ভাই দেখে। ভাইয়া বিবাহিত। ভাইয়া ফ্যামিলি নিয়ে নিচ তলায় থাকে। আর আমি দোতলাতে একাই ।বাবা মারা যাবার কয়েকদিন পর আমি বাসায় চলে আসি । এই বাসার ছেলে হলেও কারো সাথেই আমার সম্পর্ক ভালো ছিলোনা । শেষ মা মারা যাবার পরে একেবারেই বাড়িতে আসা বন্ধ করে দিসিলাম ।মা বেঁচে থাকতেও আমি বাড়িতে খুব কমই আসতাম। বড় ছেলেকে সামলাতে সামলাতে কখন যে ছোট ছেলে অনেকটা পিছিয়ে গেছে সেটা তারা খেয়ালই করেনি।আর যখন বিষয়টা খেয়াল করেছে তখনই আমি আমার পারিবারিক বন্ধন থেকে একেবারেই ছিটকে পরেছিলাম। পরে আবার যখন বাবা মারা গেলো তখন আমার ভাইয়া নিজে গিয়ে আমাকে আমার নিজের বাড়ির দায়িত্ব নিতে বলে।আর ব্যবসা থেকে যা ইনকাম আসে মাস শেষে সেটার অর্ধেক আমার ব্যাংকে জমা করে দেয়। অনার্স কম্পলিট করেছি মাস দুয়েক হলো।


বুয়া এসে রান্না আর কাপড় গুলা কেঁচে দিয়ে যায়।বই পড়া, মাঝে মাঝে কোথাও ঘুরতে যাওয়া,পরিচিত কারোর সাথে দেখা হলে ধোয়া ওঠা গরম চায়ের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা সব মিলিয়ে এভাবেই উদ্দেশ্যহীন ভাবে চলছিলো আমার দৈনন্দিন জীবন ।বাথরুম থেকে পরনের কাপড় চেঞ্জ করে টাওয়েলটা ঘাড়ের উপর নিয়ে বের হলাম আমি।



ড্রয়িংরুমে বসে লাগেজটার দিকে তাকাতেই মনের মধ্যে থাকা রহস্য বের করার করার অনর্থক চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। পুষ্পিতা এইখানে? কিন্তু কেন??

আব্দুল চাচার মেসে যখন আমি থাকতাম ঐসময় মেসের সামনে একটা বাসা ছিল যেইটা পুষ্পিতার মামার বাসা ।পুস্পিতার আব্বু নেই। দুই বছর হলো পুষ্পিতা মামার বাসায় উঠেছে। তার বাবার পেনশনের টাকা দিয়ে কোনরকম ভাবে দিন পার হয়ে গেলেও তার মামা নিজে থেকেই পুস্পিতার মা আর পুস্পিতার দায়িত্ব নেন ।


আব্দুল চাচার মেসে উঠেছি আজ চারদিন হলো।একদিন সকালে কালাম চাচার দোকানে গিয়ে বসেছিলাম।কালাম চাচার মুদির দোকান কিন্তু দুধ চা টা যা বানাই পুরাই অস্থির।এই সময়টাতে তেমন কেউ ঘুম থেকেই ওঠেনা।দোকানটা একেবারেই ফাঁকা ছিল। মাঝে মধ্যে কেউ আসছে তাদের যা লাগবে তা নিয়েই আবার চলে যাচ্ছে। আমি চাচাকে এক কাপ চা দিতে আর তার সাথে একটা বিস্কিটও দিতে বললাম। খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে একটু উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখছিলাম। আর তখনি আমি একটা মেয়ের গলার আওয়াজ শুনে খবরের কাগজটা মুখের সামনে থেকে নিচু করে সেই মেয়েটির দিকে তাকালাম।মেয়েটি আমার দিকে একবার তাকালো মনে হয় এরপর চেয়ারে বসে চাচাকে এককাপ চা দিতে বললো তার জন্য । কাপ ভর্তি করে দিবেন চাচা। চাচা হাসলো। এরপর আমাকে চা আর বিস্কিটটা দিয়ে মেয়েটার জন্যও চা বানাতে লাগলেন ।


আমি খবরের কাগজটা আমার দান পাশে রেখে চায়ের মধ্যে বিস্কিট চুবিয়ে খাচ্ছিলাম।
মেয়েটা বলে উঠলো
- এই যে মি. নিউজপেপারটা পাস করুন।
-জ্বীইই..
-বললাম খবরের কাগজটা পেপারটা দিন। কানে কম শুনেন নাকি।


আমি নিউজ পেপারটা মেয়েটার দিকে বাড়িয়ে দিলাম নিউজ পেপারটা নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো। এরপর কালাম চাচা কে দেখলাম চায়ের কাপের মধ্যে চামচ দিয়ে তার পাশে কাপটা রাখতে।কাপের মধ্যে চামচ দেয়া দেখে আমার খুব কৌতূহল হলো। আমি নিজে চা খাওয়া বাদ দিয়ে ঐ মেয়েটার চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে থাকলাম ।


মেয়েটি চামচে একটু করে চা নিয়ে এরপর ফুঁ দিচ্ছে আর চা খাচ্ছে। এই ব্যাপারটা আমার কাছে খুব মজাদায়ক মনে হলো। আমি নিজের চা খাওয়া বাদ দিয়ে বেশ মজা নিয়ে মেয়েটির ব্যাপারটা আড় চোখে চেয়ে দেখছিলাম।এরমধ্যেই মেয়েটির চা খাওয়া শেষ। চাচা কে চায়ের বিলটা দিয়ে মেয়েটি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আমাকে বললো এভাবে আড় চোখে তাকিয়ে কেউকে দেখাটা কিন্ত খুব অন্যায়।এইসব অভ্যাস বাদ দেয়াই ভালো । তার কথাটা শুনে আমি খুব বেশিই লজ্জা পেয়েছিলাম। কথাটা বলতেই মেয়েটি সেখানে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে চলে গেলো



আর আমি কিছুক্ষন মেয়েটির চলে যাওয়া চেয়ে থেকে দেখলাম এরপর চায়ের বিলটা দিয়ে মেসে ফিরে গেলাম…

পরবর্তী পর্ব কি দেখতে চান?